বুধবার , ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আর্ন্তজাতিক

দেশের অচল অবস্থাও থামাতে পারেনি মাদক কারবারিদের

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর সরকারের গণ অভ্যুত্থানের পর থেকে থানা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা-ভাংচুরের পর এক প্রকার অচল হয়ে পড়ে পুলিশি কার্যক্রম। এক পর্যায়ে কর্মবিরতিতে যায় পুলিশ। যাকে বড় সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের মাদক কারবারিরা। দেশ অচর হলে বিভিন্ন কৌশলে পাচার করেছেন লাখ লাখ পিস ইয়াবা। থেমে ছিল না খুচরা ব্যবসায়ীরা। স্থল ও নৌপথে বিভিন্নভাবে বহন করে এসব ইয়াবা নেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। 

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক সুত্র বলছে- দেশের দেড় মাসের অচল অবস্থায় ইয়াবার দাম বেড়েছে কয়েকগুন। যা কাজে লাগিয়েছেন এসব মাদক কারবারিরা। গেল ১৫ দিনে অন্তত র‍্যাব-বিজিবির হাতে ৫ লক্ষাধিক ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ধরা পড়েছে স্বর্ণ ও ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের চালানও। মাদক কারবারিদের অনেকে সুকৌশলে বিনা বাধায় ইয়াবা সরবারহ করেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

তথ্যমতে-সম্প্রতি র‍্যাব-১৫ এর একটি দল চেইন্দা এলাকায় চলন্ত মোটর সাইকেলকে থামানোর সংকেত দেয়। কিন্তু সেটির চালক না থামিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। তখন সন্দেহ বাড়লে তাদের ধাওয়া করে আটক করা হয়। পাঞ্জাবি পরিহিত এক ব্যাক্তি নিজেকে মসজিদের ইমাম দাবি করেন। অপরদিকে তার মোটরবাইকের চালক ইমাম সাহেবে বাড়ি পৌছে দিতে যাচ্ছিলেন বলে কৌশলে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গোয়েন্দারা তল্লাশীর সিদ্ধান্ত নেন। তল্লাশীর এক পর্যায়ে পাঞ্জাবি পরিহিত ছদ্ধবেশী মাদক কারাবারি মো. আবছার উদ্দিনের পকেটে মিলে দুইটি কালো রঙের বিশেষ কেক। যেখানে লুকিয়ে অনায়সে পাচার করা হচ্ছিলো প্রায় আড়াই হাজার পিস ইয়াবা। পরে তার মোটর বাইক চালক শহিদকেও আটক করে র‍্যাব সদস্যরা। 

এবিষয়ে কক্সবাজার র‍্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক এএসপি জামিলুল হক বলেন- চারদিকে যখন অচল অবস্থা সেই সুযোগে মাদক কারবারিরা নিজেদের কৌশল পাল্টে মাদক চোরাচালানে নেমেছিল। এক প্রকার সড়কে বিনা বাধায় তারা অবৈধ মাদক ইয়াবাসহ নানান অবৈধ সামগ্রী পাচার করেছে। 

গেল ১৪ আগস্ট র‍্যাব-১৫ এর টেকনাফ ক্যাম্পের একটি দল অভিযান চালিয়ে মেরিনড্রাইভ সড়কের বাহারছড়ক অংশ থেকে দুইলাখ পিস ইয়াবাসহ একজনকে আটক করে। 

গেল ৬ আগস্ট টেকনাফের খারাংখালী বিওপির আওতাধীন মৌলভী বাজার নাফনদী পয়েন্ট দিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে ইয়াবার একটি বড় চালান প্রবেশের তথ্য ছিল বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিব)’র কাছে। তথ্যমতে বিজিবির সদস্যরা উক্ত স্থানে অবস্থান নেন। তখন তারা ব্যাগ হাতে তিনজন ব্যাক্তিকে বাংলাদেশ সীমানা অতিক্রম করতে দেখেন। তখন তাদের থামার সংকেত দেন বিজিবি জওয়ানরা। কিন্তু তারা না থেমে হাতে থাকা ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যান। পরে সেই ব্যাগ তল্লাশী করে মিলে এক লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা। 

গেল ৮ আগস্ট মরিচ্যা যৌথ চেকপোস্টে তল্লাশীর সময় ৩০ বিজিবির জওয়ানরা ইজিবাইকের একযাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার মাটিয়ারা গ্রামের জাহেদ মিয়ার ছেরে রবিউল ইসলাম (২০) বরে পরিচয় দেন। তারপর হাতে থাকা ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় ১.২০০ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। যা চকলেটের প্যাকেটে মুড়িয়ে কুমিল্লা নিচ্ছিলেন রবিউল। 

১০ আগস্ট টেকনাফের হ্নীলা বিওপির উত্তর ফুলের ডেইল এলাকা থেকে ২৯.১৫ কেজি স্বর্ণসহ তিনজনকে আটক করে বিজিবি। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থও উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তারা স্বর্ণগুলো পাশ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে এনেছেন বলে স্বীকার করেন। 

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন- দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছির মাদক কারবারিরা। তাদের থামাতে আমাদের চেকপোস্টগুলো অতিরিক্ত সতর্কতা জারি ছিল। ধরাও পড়েছে অনেকে। তবে তাদের থামানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে মাদক পাচার করছে তারা। আমরা আরও সতর্কতা বাড়িয়েছি। 

রামু ৩০ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান তানজিদ বলেন- কৌশল পাল্টে মাদক কারবারিরা সক্রিয় হয়েছে। দেশের অচর অবস্থায় একজন যুবক কুমিল্লা থেকে এসে নিয়ে যাচ্ছে আইসের মতো মাদক। মাদক কারবারিরা  কুমিল্লা থেকে তাকে পাঠিয়েছে এসব মাদক পরিবহণের জন্য। যা অভাবনীয়। 

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মূখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলছেন- দেশে ছাত্র-জনতার বিজয় হয়েছে। যে কদিন অচল অবস্থা ছিল সেই দিনগুলোকে কাজে লাগিয়েছে মাদক সম্রাটগুলো। দেশে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের উচিত মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে ফিরে যাওয়া। না হয় আবারো মাদক কারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠবে। 

একদিকে মায়ানমারে অভ্যন্তরীন সংঘাত অন্যদিকে বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর অচল অবস্থা। কোনকিছুই থামাতে পারলো না মাদক কারবারিদের। মায়ানমারের যুদ্ধ অবস্থাতেও আসছে ইয়াবা আইস। যা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।”


সম্পর্কিত খবর