বুধবার , ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম

ফটিকছড়ির মানুষ হৃদয় দিয়ে জামায়াতকে বরণ করেছে: শাহাজাহান চৌধুরী

কর্ণফুলী ডেস্ক 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহাজাহান চৌধুরী বলেছেন, ফটিকছড়ির মানুষ হৃদয় দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীকে বরণ করে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। আগামীতে এই ফটিকছড়ির মাটিতে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী জনগণের ভূলুণ্ঠিত অধিকার ফিরিয়ে দিতে গণতান্ত্রিক পন্থায় ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় জামায়াতের দক্ষিণ ফটিকছড়ি শাখার উদ্যোগে আয়োজিত প্রীতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

উপজেলার ধর্মপুর আজাদী বাজার ঈদগাহ ময়দানে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সম্মেলন ঘিরে বড় জমায়েত করে জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা।

ফটিকছড়ি দক্ষিণ জামায়াতের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ আ. ন. ম আবদুশ শাকুর এর সভাপতিত্বে প্রীতি সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমীর মুহাম্মদ আলাউদ্দিন সিকদার, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক উত্তর জেলা আমীর অধ্যাপক নুরুল আমীন চৌধুরী,খাগড়াছড়ি জেলা জামায়াতের আমীর সৈয়দ আবদুল মোমেন,বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিন, উপজেলা আমীর নাজিম উদ্দিন সিকদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ফটিকছড়ির মাটি ইসলামী আন্দোলনের উর্বর ময়দান। এ মাটির সন্তানেরা ইসলামী আন্দোলনের জন্য জীবন দিয়েছে। শহীদের রক্তস্নাত ফটিকছড়িতে আজ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের পথ সুগম হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই ফটিকছড়ির জনপদে কোনো হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, মাদক চলবে না। এই ফটিকছড়িতে কোনো নাগরিকের অধিকার আর লুট করার সুযোগ কেউ পাবে না। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী আজকের এই প্রীতি সম্মেলন থেকে এই ঘোষণা দিতে চায়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী আজকের এই বাংলাদেশে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে প্রস্তুত রয়েছে। এই দেশের জনগণ মানব রচিত মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব দেখে বারবার হতাশ হয়েছে। এই মতবাদগুলো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার বদলে অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী আল্লাহ’র আইন ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের সার্বিক কল্যাণের যে ঘোষণা দিয়েছে, তা আজকে বাস্তবে তা প্রমাণ দিতেও প্রস্তুত রয়েছে। দেশের জনগণ বিগত ১৬ বছর ধরে যে হত্যা, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিষ্পেষণ, লুটপাট, প্রত্যক্ষ করেছে, তার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীকেই ভ্যানগার্ডের ভূমিকায় দেখতে চায়। আগামীতে এই ফটিকছড়ির মাটিতে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী জনগণের ভূলুণ্ঠিত অধিকার ফিরিয়ে দিতে গণতান্ত্রিক পন্থায় ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ। আজকের এই বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে ফটিকছড়ির মানুষ হৃদয় দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীকে বরণ করে নিয়েছে। এখন শুধু গণতান্ত্রিক আনুষ্ঠানিকতা বাকি।

শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ফটিকছড়ি ও দক্ষিণ ফটিকছড়ির অনেক ভাই আমার সাথে কারাগারে ছিলেন। তাদের অনেকে মায়ের জানাজায়, বাবার জানাজায় অংশ নিতে পারেনাই। আমাদের কি অপরাধ ছিল? আমাদের কেন ভুল বুঝেছেন আপনারা? আমরাতো মারামারি, কাটাকাটি চাইনাই। আমরাতো অস্ত্রের ঝনঝনানি চাইনাই। আমরা চেয়েছিলাম একটি শান্ত ফটিকছড়ি। আমরা চেয়েছিলেন সবাই মিলে আমরা ফটিকছড়িতে বসবাস করবো। রাজনীতি যার যার, কিন্তু দ্বন্দ্ব সংঘাত কারা বাধালো আপনারাই বিচার করবেন।

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আপনি বলেছিলেন, জামায়াতকে দাবিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আম স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনি জামায়াতকে দাবিয়ে রাখতে পারেননাই।

ফটিকছড়ির সাবেক এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি জামায়াতকে অনেক গালাগাল করেছেন। কিন্তু আমরা জবাব দিব না। জবাব আগামী সংসদ নির্বাচনে দেব। আপনি অনেক খেলা খেলেছেন। ফটিকছড়িতে আপনি ফেতনা ছড়িয়েছেন, ফ্যাসাদ ছড়িয়েছেন। জামায়াত-শিবিরকে দাবাতে পারেননাই। আমরা তরিকতে বিশ্বাস করি, বেদায়াত পছন্দ করিনা। আপনারা ১৪ দল জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিলেন। শেখ হাসিনা ফুলেফেঁপে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে দিয়ে ৩১ জুলাই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে দিল। এই নিষিদ্ধ ঘোষণা ৫ দিনের মাথায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পালাতে হলো। এটাই তরিকত, এটাই জামায়াতের কেরামত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমীন বলেন, ‘ফটিকছড়ির জনপদকে ইসলামী আন্দোলনের জন্য আল্লাহ কবুল করেছেন। এ মাটিতে আমাদের শহীদেরা জীবন দিয়ে গেছেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের উপর অবধারিত কর্তব্য। ফটিকছড়িতে বিগত সরকারের নেতৃত্বগুলো শুধুমাত্র হত্যা, লুটপাট, সন্ত্রাস ও রাহাজানির নিদর্শন স্থাপন করে গেছে। এ জনপদের সামাজিক বন্ধনকে ভেঙে গুড়ো গুড়ো করেছে। এ জনপদকে ভয়ের জনপদে পরিণত করেছে।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনপদ ফটিকছড়ির শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাততে পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে তুলতে আমরা আজকে শপথ বদ্ধ হলাম৷ হাজার হাজার জনতাকে সাক্ষী রেখে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, এ জনপদের মানুষ যদি আমাদের সুযোগ প্রদান করে এ জনপদে কোনো সন্ত্রাস আর থাকবে না। এ জনপদের সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত থাকবে। ফটিকছড়ির আপামর জনতার অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে আমরা এ জনপদকে একটি মডেল জনপদে রূপান্তর করবো।’

ফটিকছড়ি পেশাজীবি ইউনিটের থানা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইমামুল হক ও ফটিকছড়ি দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক সেলিম উদ্দিনের যৌথ সঞ্চালনায় প্রীতি সম্মেলনে আরও বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের সহ-সেক্রেটারি অধ্যাপক ফজলুল করিম,জেলা শুরার সদস্য আব্দুল জব্বার, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর এডভোকেট ইসমাইল গণি, ফটিকছড়ি উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইউসুফ বিন সিরাজ, হাটহাজারী উপজেলার সেক্রেটারি অধ্যাপক শোয়াইব চৌধুরী, উপজেলার ওলামা বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, এজহারুল ইসলাম, নাজিরহাট পৌরসভার সভাপতি বায়েজিদ হাসান মুরাদ, সেক্রেটারি শামসুল আরেফিন আরিফ, ছাত্রশিবিরের জেলা পূর্বের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম, শফিউল আলম নূরী।

প্রীতি সম্মেলন আয়োজন করেন দক্ষিণ ফটিকছড়ি জামায়াতের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, সেক্রেটারি অধ্যাপক সেলিম উদ্দিন, সহ সভাপতি মাওলানা তৈয়ব আলী নুরী, উপদেষ্টা মাস্টার নজরুল ইসলাম, খোরশেদুল আলম ফিরোজ, সহকারী সেক্রেটারি আবু জাফর মোহাম্মদ আলম।


সম্পর্কিত খবর