নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে সিটি গভর্নমেন্ট না থাকায় সমন্বিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী। দৈনিক কর্ণফুলীর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন ১: জনাব, ডা: শাহাদাত হোসেন, আইনী লড়াইয়ে জিতে আপনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন, আপনার অনুভূতি কি?
উত্তর: নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ পেয়ে আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারের হাজারো শুকরিয়া আদায় করছি। জনগণের ভালবাসার সর্বোচ্চ মূল্যায়নের চেষ্টা আমি করব। আমার লক্ষ্য চট্টগ্রামকে গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি সিটি হিসেবে গড়ে তোলা। ২০২১ সালে মেয়র নির্বাচনের আগে ইশতেহারের মাধ্যমে আমি নগরবাসীর কাছে এ অঙ্গীকার করেছিলাম। আমি আমার ইশতেহার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রশ্ন ২: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় নানাবিধ সমস্যা আছে, জলাবদ্ধতা, যানজট, এবং মশা তার মধ্যে অন্যতম। এই সমস্যা গুলোর সমাধানে আপনি কি ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করবেন?
উত্তর: আমি এসি রুমে বসার জন্য মেয়র পদে বসিনি। আমি রাস্তায় কাজ করার জন্য এসেছি। জনগণের পাশে থাকার জন্য এসেছি। জনগণের কাজ করার জন্য আমি এখানে রাস্তায় নেমেছি। আমি ৪১ টি ওয়ার্ডে পরিদর্শনের শিডিউল করেছি এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে জনগণের সমস্যার কথা শুনছি এবং যেসব বিষয়ে অভিযোগ আছে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নিচ্ছি।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে জনগণের সহায়তা চাই আমি। পরিদর্শনে একটি খাল দেখলাম, এটা মনে হচ্ছে একটা ডাস্টবিনে পরিণত হয়ে গেছে। সমস্ত ডাস্টবিনের ময়লা এখানে ফেলা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা দুর্ভাগ্যের বিষয়। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমাদের নিজ দায়িত্বে এই শহরকে আমার শহর মনে করে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। আমরা কোন খালকে ডাস্টবিন করতে চাই না। প্রয়োজনে আরো ডাস্টবিন আমি করে দিব। ওই ডাস্টবিনে আপনারা ময়লা ফেলবেন। এ শহর আমার একার না, সবার। তাই আমাদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন ৩: অতিমাত্রায় হোল্ডিং টেক্স নির্ধারণ নিয়ে নাগরিকদের মাঝে এক ধরনের ক্ষোভ আছে, এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহন করবেন কি?
উত্তর: আইন অনুসরণ করে জনগণের হোল্ডিং টেক্স নির্ধারণ করতে বলেছি আমি। রাজস্ব বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী পূর্বের মতো ঘুষের জন্য নাগরিকদের ভোগান্তিতে ফেললে তা মেনে নেয়া হবেনা। হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণে এবং আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনক্ষোভ নিরসণ করা হবে।
প্রশ্ন৪: ট্রেড লাইসেন্স ফি সিটি করপোরেশনের আয়ের একটি অন্যতম উৎস, এই ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়ে সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট ফি এর অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় সকল ব্যবসায়ীদের এতে করে ব্যবসায়ীগণ হয়রানীর শিকার হয়। ফলে ক্ষুদ্র, মাঝারী থেকে সকল শ্রেনীর ব্যবসায়ীদের মাঝে ট্রেড লাইসেন্স করার বা নবায়ন করার ক্ষেত্রে অনীহা সৃষ্টি হয়, সিটি কর্পোরেশন রাজস্ব হারায়। এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করবেন কি?
উত্তর: চট্টগ্রাম শহর দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ যোগানদাতা। এখানে ব্যবসা বাণিজ্য সহজীকরণ অতি জরুরি। ট্রেড লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কেউ হেনস্থা করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। ভবিষ্যতে রাজস্ব বিভাগের কার্যক্রমকে আরো বেশি অটোমেটেড করার ইচ্ছা আছে আমার, যাতে ব্যবসায়ীরা তাদের ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স ঘরে বসেই দিতে পারে।
প্রশ্ন৫ : আপনি নির্বাচিত ঘোষিত হওয়ার পর থেকে সিটি গভর্নমেন্ট নিয়ে নাগরিক সমাজে আলোচনা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ইউটিলিটি সেবা সমূহের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য এটা জরুরিও। সিট গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে আপনি কোন উদ্যোগ গ্রহন করবেন? এ বিষয়ে আপনার চিন্তা ভাবনা কি পাঠকদের সাথে শেয়ার করা যায়?
উত্তর: সেন্ট্রাল গভর্মেন্টকে আমি অলরেডি বুঝিয়েছি যে একটা জিনিস আমাদের খুব দরকার সেটা হচ্ছে সিটি গভর্মেন্ট বা নগর সরকার। চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। অথচ সিটি গভর্মেন্ট যদি থাকতো তাহলে সিটি মেয়র হিসেবে আমি আজকে সব জায়গায় অনুমোদনের বিষয়টি সহজে করিয়ে নিতে পারতাম। সিটি গভর্মেন্ট না থাকায় আমাদের যে লিমিটেশন সেই লিমিটেশনকে জয় করতে হলে আমাদের আন্তরিক হতে হবে। আন্তরিকতার উপর আর কিছু নেই। আমাদের যে ঐক্যবদ্ধতা, আমাদের যে হৃদ্যতা, এই হৃদ্ধতা ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমে আমরা আসুন সিটি গভর্মেন্ট না হওয়া পর্যন্ত আমরা মিলেমিশে সবাই একসাথে কাজ করি।
প্রশ্ন ৬: সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমুহের অনেক গুলোতে মান সম্পন্ন শিক্ষক, জনবল, অবকাঠামো গত সমস্যা রয়েছে। এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
উত্তর: শিক্ষা বিভাগে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং ঘুষের লেনদেনের মাধ্যমে অতীতে অনেক কিছু হয়েছে। অনেকের সিগনেচারে শ্রমিকও শিক্ষক হয়ে গেছে। ইনশাআল্লাহ আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এটা আর হবে না। ইতিমধ্যে অনেকে ঘুরাঘুরি করছিল আমার সাথে দেখা করতে আমি তাদেরকে মানা করে দিয়েছি। সামনে একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আনতে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করব এবং নিজেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারপ্রাইজ ভিজিট করব। শিক্ষকদের যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতির জন্যও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রশ্ন ৭: সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাজের টেন্ডার সমুহ বিগত সময়ে রাজনৈতিক এবং দলিয় সংশ্লিষ্টতায় গড়া সিন্ডিকেটের ঠিকাদারগনই কব্জা করে নেয়ার অভিযোগ আছে। ফলে কাজের মানের যেমন ঘাঠতি থাকত সেভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আর্থিক বরাদ্দের নয় ছয় হওয়ার অভিযোগ আছে প্রচুর। দীর্ঘদিনের এই অব্যবস্থা নিরসনে আপনি কি ধরনের উদ্যোগ গ্রহন করবেন?
উত্তর: প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সাথে বৈঠক করেছি আমি এ বিষয়ে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছি, ইমিডিয়েটলি সমস্ত প্রকল্পগুলো ভিজিট করে রাস্তার মালামাল ও কোয়ালিটি টেস্ট করে জানাবেন। আমি বলছি আপনারা যারা যারা ভালো কাজ করেছেন তাদের বিল দিয়ে দেয়া হবে। আর যারা খারাপ কাজ করবে তাদের পানিশমেন্টের আওতায় আনা হবে। এখানে আমি কোন ছাড় দিতে রাজি না। জনগণের টাকা নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে তাদেরকে কিন্তু আমরা পানিশমেন্টের আওতায় আনব। এটাতে আমি কোন ছাড় দিব না। কাজেই আপনারা কোয়ালিটির দিক দিয়ে সুন্দরভাবে কাজ করেন।
আমি ঠিকাদারদের বলেছি, এই শহর আমার আপনার সবার। এখানকার রাস্তা দিয়ে আমার পরে আমার ছেলে মেয়েরা হাঁটবে, আত্মীয়স্বজন হাঁটবে, নেক্সট জেনারেশন এ পথ দিয়ে হাঁটবে। তাই কাজের কোয়ালিটি শতভাগ ঠিক রাখতে হবে। এমন ভাবে রাস্তাটা করতে হবে যাতে বছরের পর বছর একটা উদাহরণ হিসেবে সবাই বলতে পারে যে এই রাস্তাটা অমুক প্রতিষ্ঠান করেছে। আপনারা কেউ কোন টাকা ঘুষ হিসেবে কাউকে দিবেন না। কোন কোন কাউন্সিলর আগে আপনাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এটার তালিকা দিন। যদি কোন কর্মকর্তা আপনাদের কাছে টাকার ডিমান্ড করে সরাসরি আমার কাছে জানাবেন তাকেও পানিশমেন্টের আওতায় আনবো। এখানে কোন ছাড় দেওয়া হবেনা। আপনারা সরাসরি কাজ করবেন, ভালো কাজ করবেন এবং এই ভালো কাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরকে আপনারা সুন্দর করে তুলবেন এবং একটা পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত করবেন। রাস্তা যখন আপনারা করতে যাবেন সুযোগ থাকলে, প্রয়োজন থাকলে রাস্তার পাশে ডাস্টবিন করে দিবেন, গাছ লাগাবেন। নগরীর উন্নয়নে ইনোভেটিভ কিছু করার চেষ্টা করেন।
প্রশ্ন ৮: চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়নে নগরবাসীর কাছে আপনি কি ধিরনের সহযোগিতা আশা করেন?
উত্তর: আমি জনগণের সচেতন আচরণ প্রত্যাশা করি। বিশেষ করে নগরীকে পরিস্কার ও ডেঙ্গুমুক্ত করতে নগরবাসীর সচেতন আচরণের বিকল্প নেই৷ এছাড়া, যারা গৃহকর দিচ্ছেননা তারা কর প্রদানের মাধ্যমে নগরীর উন্নয়নে শামিল হতে পারেন। নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতেও সচেতন আচরণ প্রয়োজন।