নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রাম নগরীর হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজে আট শিক্ষক বরখাস্ত করাকে কেন্দ্র করে কলেজে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের পতন হলেও সাবেক মন্ত্রী পুত্রের দাপটে সবকিছু বাস্তবায়ন হচ্ছে এই কলেজে। শিক্ষার্থীদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন এই ৮ শিক্ষক। সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানের ইন্ধনে তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল রবিবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলও করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা হলেন- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক কাজী মঈনুল ইসলাম, উচ্চতর গণিত বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ ছাবের উদ্দীন, গণিত বিভাগের প্রভাষক মো. আবদুল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এ কে এম নাজমুল হাসান, পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল হাসান, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক নুরুল আবছার ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. জমশেদ উদ্দিন চৌধুরী।
কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাসিক বেতন ও ভর্তি কমানোসহ চার দফা দাবিতে গত ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের মুখে সাবেক তিন অধ্যক্ষকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এস এম আইয়ুবকেও সাময়িকভাবে কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। তদন্তে এস এম আইয়ুব নির্দোষ প্রমাণ হলে পুনরায় স্বপদে যোগদান করার কথা ছিল। সেদিনের পর থেকে আর কলেজে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেননি তিনি। এ ঘটনার দুই মাস পর গত ২৩ নভেম্বর অধ্যাপক আইয়ুব হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তবে এই মৃত্যুর জন্য বরখাস্ত হওয়া আটজন শিক্ষককে দায়ী করেন কলেজেটির গর্ভনিং বডি। পরে এই ৮ শিক্ষককে একযোগেে কলেজ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় ৩৩ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজ। ৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন শতাধিক। নগরীতে রাজনীতিমুক্ত কলেজ হিসেবে বেসরকারি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচিত। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তবে কলেজটি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন সাবেক মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমান। শিক্ষার্থীদের দাবি, মুজিবুরের নিয়ন্ত্রণধীন গর্ভনিং বডি মিথ্যা অভিযোগে ৮ শিক্ষককে বহিষ্কার করেছেন।
বরখাস্ত হওয়া একাধিক শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলা ও জুলাই বিপ্লবে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় তাদেরকে কলেজ কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করেছে। এ সময় তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
৮ শিক্ষককে পুর্নবহাল করার দাবি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও বরখাস্ত ৮ শিক্ষককে পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার পুরান চান্দগাঁও থানার কলেজের সামনে এই কর্মসূচি পালন করে তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, সাবেক উপাধ্যক্ষ আইয়ুব স্যারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কিছু কুচক্রী মহল রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। এমন কর্মকাণ্ড ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পুরনো স্বভাব। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী মন্ত্রীপুত্র মুজিবুর রহমানের দাপটে কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসাইনকে দিয়ে এসব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
আন্দোলনরত এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনাস মাহির বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা কলেজের দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করেছি। সেই আন্দোলনে অনেক শিক্ষক আমাদের পাশে ছিলেন। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবে যে কয়েকজন শিক্ষক ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, বেঁচে বেঁচে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানের নির্দেশে এমনটা করা হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি। নতুন বাংলাদেশে সৃষ্টিতে ছাত্রদের পাশে থাকা শিক্ষকদের বহিষ্কার আমরা মেনে নেব না। অবিলম্বে তাদের পূর্নবহাল করতে হবে।
শাহরিয়ার আদনান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আইয়ুব স্যারকে কলেজের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার পরও স্বাভাবিক ছিলেন। তিনি নিয়মিত ওনার ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়েছেন। স্যারের আকষ্মিক মৃত্যু আমাদের কখনো কাম্য ছিল না। তার মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে। কিন্তু এই মৃত্যুকে ঘিরে কলেজে বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টি করছে স্বৈরাচারের দোসররা।
কলেজের অ্যাডহক কমিটি অবৈধ দাবি করে মোহাম্মদ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ৫ আগস্টের পর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এরপর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরীর নেতৃত্বে হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজে অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দেয়। কিন্তু আওয়ামী নেতা মুজিবুর রহমানের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা অ্যাডহক কমিটিকে কলেজে ঢুকতে দেয়নি। বর্তমানে কলেজটিতে অবৈধ অ্যাডহক কমিটি কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জানতে চাইলে হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চয়ন দাশ বলেন, আমার স্বাক্ষরে আট শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে, সেটা ঠিক। তবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আমার না। কলেজের অ্যাডহক কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে বরখাস্তের চিঠিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে, আমি স্বাক্ষর করেছি।
গতকাল শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও সংযোগ যাওয়া যায়নি।