নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমির ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী শাসনের ১৮ বছরে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের যে মঞ্চে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল তাকেও একই মঞ্চে নিয়ে ফাঁসি দিতে হবে। ফ্যাসিস্টের বিচার না হওয়া পর্যন্ত শেখ পরিবার বাংলার জমিনে আর রাজনীতি করতে পারবে না।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খুলশী থানা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আলমগীর ভুইঁয়ার সভাপতিত্বে, খুলশী থানার নায়েবে আমির আইয়ুব আলী হায়দার, সেক্রেটারি আমান উল্লাহ আমান ও কর্মপরিষদ সদস্য দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমির পরিবেশ বিজ্ঞানী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগরী জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস এবং মহানগরী জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী। সম্মেলনে দারসুল কোরআন পেশ করেন সাতকানিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মনিরুল আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহানগরী জামায়াতের আমির আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ১৯৭২ সালে দেশে এসে জামায়াতে ইসলামীর উপর আঘাত করে শেখ মুজিব। ১১ জন কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীসহ সারাদেশের ৬০০ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছিল। শেখ মুজিব জামায়াতে ইসলামীকে দাবায়ে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। কোন ইসলামী দলকে কাজ করতে দেয়নি। ১৯৯০ সালে অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা দখল করে স্বৈরশাসন চাপিয়ে দিয়েছিল এরশাদ সরকার। উপমহাদেশে একমাত্র সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর উপর সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে, সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে এই দলের নেতাকর্মীরা। জামায়াতে ইসলামী দমে যাওয়ার দল নয়। এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করে না।
তিনি বলেন, গত দীর্ঘ ১৮ বছর শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে জামায়াতে ইসলামীর উপর। এমন কোনো নির্যাতন নেই শেখ হাসিনা করনি। এমন কোনো ষড়যন্ত্র নেই তার দলের লোকেরা করেনি। এমন কোনো পদক্ষেপ নেই আওয়ামী লীগ জামায়াতের বিরুদ্ধে নেয়নি। শেখ হাসিনা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নয়। আমাদের নিষিদ্ধ করে ৫ দিনও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হলেন।
তিনি আরো বলেন, আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ এবং দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সকলে কর্মীদের অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ অকার্যকর রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং দুর্নীতি পরায়ণ প্রশাসন দ্বারা দেশের মানুষের মুক্তি মিলবে না। এই জন্য নিয়মিত দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান আদর্শ মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে এবং জাতি গঠনের জন্য জামায়াতে ইসলামীর কার্যকর ভূমিকা মানুষের কাছে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে।
দেশের এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতি হয়নি। ব্যাংক খাত, শিক্ষা খাত ধ্বংস কর দিয়েছে। বাংলাদেশের সম্পদের ১৬% বুর্জুয়া পরিবার দখল করে ফেলেছে। বৈষম্য তৈরি করে দিয়ে তারা পালিয়েছে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমির পরিবেশ বিজ্ঞানী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জাতির সংকট মুহুর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ম বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। তিনি ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। এই ঐক্যের ভিত্তি রচনা হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে। আমরা যদি জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে পারি তাহলে দেশকে ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচাতে পারব। তারপর তারা আগরতলায় বাংলাদেশি হাইকমিশনে হামলা করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল কিন্তু আমরা জাতিবর্ণ নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা শান্তভাবে মোকাবিলা করেছি।
তিনি আরো বলেন, শুধু ইসকন নয় যারাই দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। শৈবাল দাশ সুমন, নুরুল আজিম রনি সহ চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করতে যারা কলকাটি নাড়ছে তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান জাতি, ধর্ম, বর্ণ মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তাই অমুসলিমদের অধিকার আদায়ে ও আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে যারা অস্থিতিশীল করতে চায় তাদেরকে ও গ্রেফতার করতে হবে। সংগঠিত উপায়ে সাংগঠনিকভাবে সবার নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে।
কর্মী সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন পাঁচলাইশ থানা আমির ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল হাসান রুমি, খুলশী থানার নায়েবে আমির আইয়ুব আলী হায়দার, চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ ছাত্র শিবিরের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এমারতের আমির মো. ওমর ফারুক, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আমির মো. আবু রাশেদ, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহফুজ আলম, রেলওয়ে শ্রমিক নেতা সেলিম পাটোয়ারী প্রমুখ।
কর্মী সম্মেলনে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন পারাবার শিল্পী গোষ্ঠী ও মো. জাহাঙ্গীর আলম।