চট্টগ্রাম মহানগর পিপি কার্যালয়ের ১ হাজার ৯১১টি মামলার কেইস ডকেট বা সিডি গায়েব হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। এটি চুরি নাকি এর নেপথ্যে ষড়যন্ত্র আছে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতগুলো মামলার সিডি কীভাবে গায়েব হয়ে যায়? এতগুলো মামলার সিডি কি একজনের পক্ষে সরানো সম্ভব? যদি গায়েব হয়, তা কি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে?
এদিকে আদালত ভবন থেকে সিডি গায়েব হওয়ার পেছনে কী, তা খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মামলার সিডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছাড়া মামলার ট্রায়াল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি ছাড়া আদালতে পিপি কথা বলতে পারবেন না। আদালতের মতো স্থাপনার নিরাপত্তায় শৈথিল্য ভাব দেখে আমরা উদ্বিগ্ন। আদালত বা জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ট্রেজারি শাখা থেকে কোনো রেকর্ড বা স্ট্যাম্প যদি গায়েব হয়ে যায় তাহলে আরো বড় সমস্যা দেখা দেবে। এজন্য আদালতপাড়ায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন। সেটি হতে হবে শক্ত নিরাপত্তাবলয়।
তিনি বলেন, আদালতে পিপি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রেকর্ড রাখার মতো প্রয়োজনীয় কক্ষের ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত লোক নেই। শুধুমাত্র একটি ছোট কক্ষে পিপি অফিস করেন। সেখানে মামলার সিডিতে ভরপুর। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে অফিসটির সামনের বারান্দায় প্রায় দুই হাজার মামলার সিডি রাখা হয়েছিল। এখন সেগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনাস্থল নতুন আদালত ভবনের তৃতীয় তলা ও এর উপরের চতুর্থ তলায় সিসিটিভি নেই সম্ভবত। তবে নিচতলা ও দোতলায় রয়েছে। আদালতপাড়ায় জেলা প্রশাসন ও জেলা আইনজীবী সমিতির সিসিটিভি রয়েছে। আশা করছি, তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ফুটেজ চেক করে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেবে। তদন্ত সংস্থা কাজ শুরু করেছে শুনেছি। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
চট্টগ্রাম আদালতপাড়ার নতুন আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় মহানগর পিপির অফিস। অফিসটির বাইরে বারান্দায় প্লাস্টিকের বস্তায় ১ হাজার ৯১১টি মামলার সিডি রাখা হয়েছিল। এসব সিডি গায়েব হয়েছে মর্মে গত রোববার নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি জিডি করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূইয়া। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, মহানগর পিপি অফিসে প্রায় ২৮ থেকে ৩০টি আদালতের কেইস ডকেট রাখা ছিল। পিপি অফিসে জায়গার স্বল্পতার কারণে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল পিপি অফিসের সামনের বারান্দায় প্লাস্টিকের বস্তায় মোট ১ হাজার ৯১১টি মামলার কেইস ডকেট পলিথিনে মুড়িয়ে স্তূপ আকারে রাখা ছিল।
সর্বশেষ গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মহানগর কোর্টের ভেকেশন কোর্ট ছিল। তারপর থেকে মহানগর আদালত ও পিপি অফিস বন্ধ থাকা অবস্থায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে হারিয়ে গেছে। আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করেও কেইস ডকেটগুলো পাওয়া যায়নি।
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একটি মামলার অনেকগুলো কাগজপত্র থাকে। এর মধ্যে কিছু কাগজপত্র তদন্ত কর্মকর্তা বা থানা, পিপি ও আদালত এই তিনটি জায়গায় থাকে। আবার কিছু কাগজপত্র, বিশেষ করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তদন্ত কর্মকর্তা বা থানা ও পিপির কাছে থাকে। আদালতের কাছে থাকে না। সেই হিসাবে হারিয়ে যাওয়া মামলার কেইস ডকেটগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূইয়া বলেন, পিপি অফিসের ১ হাজার ৯১১টি মামলার কেইস ডকেট পাওয়া যাচ্ছে না। হারিয়ে গেছে উল্লেখ করে একটি জিডি করেছি। এখন থানা পুলিশ সেটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আদালত থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। সেখানে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের রাখা হবে। কবে এ তদন্ত কমিটি হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি বলতে পারছি না।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম বলেন, আমাদের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমরা পিপির করা জিডিটি তদন্ত করছি। আজকে (গতকাল) আমাদের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নানা আলামত নেওয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থল ভবনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজগুলো সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হবে। হারিয়ে যাওয়া কেইস ডকেট আদালতপাড়ায় রয়েছে নাকি আদালতপাড়া থেকে বের হয়ে গেছে সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেওয়া হচ্ছে।
(সূত্রঃ আজাদী)