নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের সংগঠক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নব নির্বাচিত ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কারাবন্দি ইঞ্জিনিয়ার বোরহান উদ্দিনের মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার স্ত্রী ফারজানা ও পরিবারের সদস্যবৃন্দ।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস.এম রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কারাবন্দি
ইঞ্জি: বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা ফারজানা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি একটা লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন-
গত ৯ জানুয়ারি বিকাল ৪টায় আমার স্বামী ইঞ্জিনিয়ার বোরহান উদ্দিনকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা সাজিয়ে সাদা পোশাকে ডিবি পরিচয়ে চান্দগাঁও বাহির সিগন্যাল ফোর এইচ ফ্যাশন থেকে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমার স্বামীকে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, তাকে ধরতে গিয়ে নাকি গোলাগুলি হয়েছে। যা একেবারে সম্পূর্ণ মিথ্যা, সাজানো ও বানোয়াট। ইতিপূর্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় ঘোষণা দিয়েছিলেন সাদা পোশাকে কোন অভিযান করতে নিষেধ করার পরও কেন তারা এমন কাজ করেছে তা কল্পনার বাইরে।
তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নানানভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে আমার স্বামীকে নিয়ে। তাকে শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে এবং বহু মামলার আসামী হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সিএমপি’র পুলিশ প্রশাসনের পাঠানো বিবৃতিতে এমন কোনো শব্দ নাই যা বলা হয়নি। আমার স্বামী একজন শান্তিপ্রিয় ব্যবসায়ী। অথচ পুলিশ এসমস্ত মিথ্যা অপপ্রচার করে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করেছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা সাজানো ও বানোয়াট। আমার স্বামী কোনদিন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আছেন প্রমান করতে পারলে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়ে আমার স্বামীকে পুলিশ প্রশাসনের নিকট তুলে দেব। আমার স্বাামীর স্কুল ও কলেজ জীবনে মানবিক কর্মকান্ড, পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মী এবং সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে রাতদিন কাজ করেছেন। যা অনেকের কাছে শত্রুতার কারণ হয়ে উঠেছে।
কিছুদিন ধরে তাকে একটি পক্ষ চাঁদার জন্য হুমকি দিচ্ছিলো। এমনকি চাঁদা না দিলে হত্যা করা হবে। যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে লাশ ফেলে দেওয়া হবে ইত্যাদি। আমার স্বামী চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় একটি পক্ষ দীর্ধদিন ধরে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছিলো। তারা এতদিন যা মুখে বলেছিল, গত ৯ জানুয়ারি তা সফল করেছেন। আমার স্বামী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে মিথ্যা মামলার গ্রেফতার করার ফলে আমাদের পরিবারের জীবনে দুঃখের ছায়া নেমে এসেছে। আমার দুই মেয়েকে নিয়ে পরিবার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, বোরহানকে আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসর ও পুলিশের সাজানোর মিথ্যা মামলা দিয়েও হয়রানি জন্য দীর্ঘদিন যাবত চেষ্টা করছে। যা খুবই অমানবিক ও দুঃখজনক।
উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি গ্রেফতার করার পর আমার স্বামীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং তাকে চোখ বেঁধে কোথায় রাখা হয়েছে বারবার পুলিশ প্রশাসনের নিকট আমি এবং মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানতে চাইলে বায়েজিদ থানা বলেন আমরা গ্রেফতার করিনি, চাঁন্দগাও থানা বলেন আমরা গ্রেফতার করি নি। ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারাও বলেন আমরা জানি না। অথচ তাদের পাঠানো মিথ্যা, বানোয়াট বিবৃতি প্রদান করার ক্ষেত্রে আমার স্বামীকে গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। আমরা পরিবারের সদস্যরা পরের দিন ১০ জানুয়ারি আদালতে গিয়ে জানতে পারি তাকে নাকি কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আপনাদের মাধ্যমে আমার প্রশ্ন কখন আদালতে উঠানো হলো, কখন কারাগারে পাঠানো হলো? আমার স্বামীর অবস্থান সম্পর্কে গোপন করা হয়েছিল কেন? এই লুকোচুরি কর্মকান্ড প্রতীয়মান হয় যে, আমার স্বামীকে খুন, গুম করার উদ্দেশ্যে আমাদের নিকট থেকে তার অবস্থান গোপন রেখেছে।
সাংবাদিক ভাই বোনেরা
আপনারা জাতির বিবেক, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আপনারা সত্য খবর তুলে ধরুন, তদন্ত করুন। আমার স্বামী জুলাই আগস্ট স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিজের জীবন বাজি রেখে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি সাম্য ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে কাজ করেছেন। কিন্তু আমার স্বামী এখন মিথ্যা, বানোয়াট, সাজানো মামলার বৈষম্যের শিকার। যা কোনভাবে কাম্য নয়।
আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। এই ঘটনা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত সত্য বের করা হোক। নিরপরাধ আমার স্বামীকে যেন হয়রানি করা না হয়।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই বোনেরা
আপনাদের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে আবেদন, অনতিবিলম্বে মিথ্যা, বানোয়াট, মামলা সাজিয়ে আমার স্বামীকে গ্রেফতার করার জন্য প্রতিপক্ষের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যে সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত তাদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ ন্যাশনাল বোর্ডের প্রধান এম এ হাশেম রাজু, চট্টগ্রাম বিভাগের কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ওসমান গণি, চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম পরিচালক প্রফেসর মো: আরিফুর রহমান, সদস্য শাহাদাত হোসেন ফয়সাল, তৌহিদুল ইসলাম তায়রন, মো: আবদুল জলিল মিয়া, বোরহান উদ্দিনের শশ্বুর নুর আহমেদ, ভাই মো: জোনায়েদ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান এবং সত্য উপস্থাপন করে কারাবন্দী স্বামীর মুক্তির পথে সহায়ক ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা কামনা করেন।