বৃহস্পতিবার , ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অপরাধ

দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় মনিলালের

রফিক মোহাম্মদ:

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) মহাব্যবস্থাপক (বণিজ্য ও অপারেশন) মনি লাল দাশের দেশের বাইরে সম্পদ আছে কি না তা জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে দেশের বাইরে অবৈধ অর্থ পাচার, সম্পদ, অপরাধসহ নানা তথ্য জানা যাবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।

তিনি বলেন, আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিএফআইইউকে চিঠি দিয়েছি। তারা মিউচুয়াল লিগ্যাল এসিস্ট্যান্স রিকুয়েস্টের মাধ্যমে সন্দেহভাজন কয়েকটি দেশের মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। সেখান থেকে রিপোর্ট আসার পর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, মনি লাল দাশ বিপিসি’র মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে সরকারি-বেসরকারি যৌথ মালিকানার স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল লিমিডেটের (এসএওসিএল) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি মনি লাল দাশ কৈবল্যধাম মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।

অভিযোগ রয়েছে, বিপিসিতে অবৈধভাবে উপার্জিত আয় কৈবল্যধামে তিনি ব্যয় করেন ধর্মীয় কাজে।

এসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে কৈবল্যধামের মোহন্ত মহারাজ কালীপদ ভট্টাচার্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তাঁর সহকারী রতন আচার্য সাড়া দেন। তিনি বলেন, মহারাজ চিকিৎসার কাজে ভারতে অবস্থান করছেন।

রতন আচার্য বিপিসির মনি লাল দাশের সম্পর্কে বলেন, ‘মনি লাল দাশ আমাদের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তার কাজ-কর্ম সম্পর্কে কৈবল্যধামের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আমাদের একজন ভক্ত।’

এদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক মনিলাল দাশ বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দীর্ঘ অনুসন্ধানে মনিলাল দাশ ও তার স্ত্রী সেপিকা দাশের নামে আড়াই কোটি টাকারও বেশি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় সংস্থাটি। এ জন্য স্বামী স্ত্রী দুজনের নামে সম্পদ বিবরণী দাখিলের সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

আরও জানা যায়, মনি লাল দাশ ১৯৯৯ সালে সহকারী ব্যবস্থাপক (এমআইএস) হিসেবে বিপিসিতে যোগদান করেন। এরপর ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) হিসেবে কর্মরত আছেন। দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে, মনি লাল দাশের দায় বাদে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় ৩ কোটি ২৩ লাখ ১৩ হাজার ৮০৪ টাকা। পাশাপাশি তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় হয় ৯৪ লাখ ১০ হাজার ৪০৩ টাকা। সবমিলিয়ে তাঁর ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৭ হাজার ২০৭ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এর বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৩ কোটি ৪০ লাখ ৯২ হাজার ১৯৩ টাকা। বাকি ৭৬ লাখ ৩৫ হাজার ১৪ টাকার সম্পদ তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জন বলে দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে।

আবার, মনি লাল দাশের স্ত্রী সেপিকা দাশের পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ পাওয়ায় যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬১ হাজার ৯২৭ টাকার। এর বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় মাত্র ৫৭ লাখ ৪৪ হাজার ৬৭২ টাকা। বাকি ১ কোটি ৮৭ লাখ ১৭ হাজার ২৫৫ টাকা আয়ের উৎস কম পাওয়া যায়। যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে।

আলোচ্য কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল করেছে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ। প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখের পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী দু’জনের সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের সুপারিশ করা হয়।

তবে এসব ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মনি লাল দাশ।তিনি বলেন, ‘আমি এসএওসিএল এ দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় অনেক কাজ করেছি। এতে অনেকে ব্যক্তিগত সুবিধা না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে অবস্থান করে। সেগুলো নিয়ে এ চক্রটি চক্রান্ত করে যাচ্ছে। তারা দুদকসহ বিভিন্ন জায়গায় ভিত্তিহীন চিঠি দিয়ে যাচ্ছে। যার কোনো সত্যতা নেই।


সম্পর্কিত খবর