বুধবার , ২২শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম

বাইশারীর জনগণ জামায়াতে ইসলামীকে হৃদয় দিয়ে বরণ করে নিয়েছে

নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীতে ইতিহাসের প্রথম প্রকাশ্যে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বান্দরবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রথম এবং প্রকাশ্যে বিশাল কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত কর্মী সম্মেলনে প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে এ কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে দলে দলে মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন।

সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি বাইশারী ইউনিয়ন আমীর মোঃ ছলিম উল্লাহ বলেন, বাইশারীতে জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবধি চলমান আছে এবং থাকবে। ১ মিনিটের জন্য জামায়াতের কার্যক্রম বন্ধ হবে না ইনশাআল্লাহ। হয়তো বাইশারীতে জামায়াতের এরকম খোলা মাঠে প্রকাশ্যে আমরা প্রোগ্রাম করতে পারিনি কিন্তু আমাদের সাংগঠনিক প্রোগ্রাম গুলো প্রতিমাসে ইনডোরে সম্পন্ন করেছি। সামাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা প্রকাশ্যে প্রোগ্রাম করেছি এর ধারা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমরা বাইশারীর বাসীর জন্য আরো সুন্দর সুন্দর প্রোগ্রাম নিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হবো।

কর্মী সমাবেশের আয়োজক কমিটির পরিচালক নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আমীর ওমর ফারুখ সিরাজী বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি মানবতাবাদী জনবান্ধব সংগঠন। জনগণের সেবা করাই জামায়াতে ইসলামীর কাজ। সম্মেলনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে বলেন আশার চেয়ে ডাবল জনশক্তি সমাবেশে এসেছেন। এখানে সমস্ত ধর্মের লোকজন উপস্থিত ছিলো। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিন্দু, বড়ুয়াদের উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন তারা জামায়াতকে ভালবেসে সমাবেশে এসেছেন। জামায়াতে ইসলামী সমস্ত মানুষের দ্বারে দ্বারে কুরআন ও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ জামায়াতে ইসলামীকে মানুষ স্বাদরে গ্রহণ করছে এবং কাছে টেনে নিচ্ছে

আয়োজক কমিটির উপদেষ্টা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিক বশরী বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হলো দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার অগ্রসেনানী। দেশের যে কোন বিপর্যয়ে সংকটে জামায়াতে ইসলামী সবার আগে এগিয়ে আসে। বাইশারীতে জামায়াতের গণজোয়ার শুরু হয়েছে। জামায়াতকে মানুষ নতুনভাবে চিনতে শুরু করেছে। জামায়াতের সমাজকর্ম দেখে মানুষ দলে দলে জামায়াতে ইসলামিতে যোগ। আগামীর বাইশারী হবে জামায়াতে ইসলামীর বাইশারী ইনশাআল্লাহ।

আয়োজক কমিটির তত্ত্বাবধায়ক ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও ছাত্র আন্দলোন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম আজাদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শিক সুশৃঙ্খল, দেশপ্রেমিক মুক্তিকামী মানুষের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। জামায়াতে ইসলামী কোন রাজনৈতিক দলের কথা বলেনা, আমরা মানবতার মুক্তির কথা বলি।
বিগত ১৮ বছর জামায়াতে ইসলামী তাদের কোনো কাজ করতে পারেনি, স্বৈরাচার সরকার টুটি চেপে ধরেছিল। স্বৈরাচার সরকারের আমলে আমরা নিজ মাতৃভূমি বাইশারীতে আসতে পারিনি। আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে দমন নিপীড়ন করা হয়েছে। তারা আমাদেরকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলো, কিন্তু জনগণ আমাদেরকে আপনকরে কাছে টেনে নিলো।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাইশারী ইউনিয়ন শাখার আমীর মোঃ ছলিম উল্লাহর সভাপতিত্বে ইউনিয়ন সেক্রেটারি মাওলানা মোঃ আহসান হাবিবের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বান্দরবান পার্বত্য জেলার আমীর এস এম আব্দুস সালাম আজাদ। প্রধান আকর্ষণের বক্তব্য রাখেন সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদের সন্তান আলী আহমদ মাবরুর।

এতে বিশেষ আকর্ষণের বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বান্দরবান পার্বত্য জেলার নায়েবে আমীর ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এডভোকেট আবুল কালাম।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফারুক আহমেদ, রামু উপজেলা জামায়াতের আমীর ফজলুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মামুন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক হামেদ হাসান, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মোঃ ইলিয়াছ সওদাগর, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবু নাছের সহ প্রমূখ।

কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল লিমিটেডের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এতে চাকমা,মারমা তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, মুসলিম, হিন্দু, বড়ুয়াসহ প্রায় ৮০০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। এমন মানবতার সেবার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে তারা ধন্যবাদ জানান।

কর্মী সম্মেলন শেষে এলাকাবাসীর জন্য মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশনা করেন পাঞ্জেরী শিল্পী গোষ্ঠী চট্টগ্রাম।


সম্পর্কিত খবর