চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম পরিবর্তন করে শহীদ ওয়াসিম উদ্দিনের নামে করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রামে প্রথম শহীদ হন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম উদ্দিন। গত বুধবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তনের এ সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নিশ্চিত করেছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচল শুরুর আগে এক্সপ্রেসেওয়ের নাম পরিবর্তন করা হলো। আজ শুক্রবার টোল আদায়ের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হচ্ছে।
এর আগে নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ করা হয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিনবারের মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে। ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ নামে এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছিলেন।
নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান।
চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ ওয়াসিম আকরাম গত বছরের ১৬ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে নগরের মুরাদপুরে নিহত হন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
এর আগে চট্টগ্রাম নগরের আমবাগান এলাকার শেখ রাসেল পার্কের নাম পরিবর্তন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ওয়াসিম আকরামের নামে নামকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে পার্ক পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেন।
টোল আদায় শুরু হয়েছে
চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় কার্যক্রম আজ থেকে শুরু হচ্ছে। গৃহায়ণ ও গণপূর্তবিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের টোল আদায় কার্যক্রম উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এক দফা পিছিয়ে আগামীকাল নতুন করে সময় নির্ধারণ করা হয়। এর আগে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর টোল নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। যদিও পরে তা স্থগিত করা হয়।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল আদায়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। এখন থেকে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে টাকা দিতে হবে। নগরের পতেঙ্গা প্রান্তে টোল আদায় করা হবে। এখন সিডিএ টোল আদায় করবে। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সাড়ে ৯ মাস পর পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। আজ দুপুরে এক্সপ্রেসওয়ের টাইগার পাস প্রান্তেছবি: সৌরভ দাশ
২০১৭ সালে অনুমোদন হওয়া এই প্রকল্পের কাজ সাড়ে সাত বছরেও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি সিডিএ। এখন পর্যন্ত শুধু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প নির্মাণ করার কথা। তবে সরকার পরিবর্তনের পর ছয়টি র্যাম্প বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯টির মধ্যে ১টির কাজ শেষ হয়েছে, অন্য ৮টির কাজ চলমান রয়েছে। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে উদ্বোধন হলেও তখন গাড়ি চলাচল শুরু হয়নি। গত বছরের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্ধারণ করা টোলের হার পরিবর্তন করে গত বছরের ৩ নভেম্বর নতুন প্রস্তাব পাঠায় সিডিএ। ২৭ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় টোলের হার চূড়ান্ত করে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচলের সুযোগ রেখে টোলের হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল এবং ট্রেইলার ওঠা-নামার সুযোগ রাখা হয়নি।
চূড়ান্ত হওয়া টোলের হার অনুযায়ী, সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে টোল দিতে হবে ৩০ টাকা। কার–জাতীয় গাড়িকে দিতে হবে ৮০ টাকা। জিপ ও মাইক্রোবাসের জন্য টোলের হার ১০০ টাকা। পিকআপ থেকে নেওয়া হবে ১৫০ টাকা। মিনিবাস ও ট্রাক (চার চাকা) থেকে ২০০ টাকা করে এবং বাস থেকে ২৮০ টাকা নেওয়া হবে। ট্রাকের (৬ চাকা) জন্য ৩০০ টাকা এবং কাভার্ড ভ্যানের জন্য ৪৫০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।