আরাকান আর্মির দাপটের কারণে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আসা চালের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। ভারতের পর এবার মিয়ানমার থেকেও চাল এলো দেশে। সরকারি চুক্তির আওতায় এমভি গোল্ডেন স্টার নামে একটি জাহাজ ২২ হাজার টন চাল নিয়ে বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে নোঙর করেছে। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ১ লাখ ৫ হাজার টন আতপ চালের প্রথম চালান এটি। জাহাজটির চালের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা শেষে গতকাল শুক্রবার বিকাল থেকে খালাস শুরু হয়েছে। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা চালের প্রথম চালান বলে সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে রয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নেয় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। সর্বশেষ ৫ নম্বর সীমান্ত ব্যাটালিয়নটিও তারা দখলে নেয়। এরপর থেকে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ মিয়ানমার থেকে টেকনাফে আসেনি। সর্বশেষ ইয়াঙ্গুন থেকে গত ৩ ডিসেম্বর টেকনাফে পণ্যবাহী জাহাজ এসেছিল। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারের কাছ থেকে আমদানি করা ১ লাখ ৫ হাজার টন চাল সিডিউল অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে চট্টগ্রাম পৌঁছা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। উক্ত চালগুলো ছোট এবং মাঝারি আকারের ১০টি জাহাজে চট্টগ্রামে পৌঁছার কথা রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফ নদীর মোহনায় পণ্যবাহী দুটি কার্গো বোট আটকে রাখে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বাংলাদেশ–মিয়ানমার নাফ নদীর জলসীমা নাইক্ষ্যংদিয়ায় তল্লাশির কথা বলে পণ্যবাহী নৌযান দুটি আটকে দেয় আরাকান আর্মি। অপর একটি বোট সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে নোঙর করেছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার থেকে পণ্যবাহী তিনটি কার্গো টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার কথা ছিল আজ। কিন্তু নাফ নদীর মোহনায় তল্লাশির কথা বলে দুটি কার্গো আটকে দেয় আরাকান আর্মি। ফলে পেছনে থাকা একটি কার্গো সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে নোঙর করেছে। বাকি দুটির এখন পর্যন্ত কোনো খবর পাইনি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের প্রভাবে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি পুরোপুরি থমকে আছে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে, টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এক মাসের বেশি সময় পর ইয়াঙ্গুন থেকে পণ্যবাহী তিনটি কার্গো টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নাফ নদীর মোহনায় সেদেশের জলসীমার নাইক্ষ্যংদিয়ায় তল্লাশির কথা বলে দুটি কার্গো আটকে দেয় আরাকান আর্মি। এই খবরে অন্য কার্গোটি সেন্টমার্টিন দ্বীপে নোঙর করে। আটকে রাখা দুটি কার্গোতে ৩০ হাজারের বেশি বস্তা পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে আচার, শুটকি ও সুপারিসহ বিভিন্ন মালামাল আছে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে মিয়ানমার থেকে পণ্য আসা বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ যে তিনটি বোট আসছিল সেগুলোও বাধার মুখে পড়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমার থেকে সরকারি চাল নিয়ে জাহাজ আসতে পারে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। তবে শেষ পর্যন্ত ঝামেলা ছাড়া চালবোঝাই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।
জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট সেভেন সীজ শিপিংয়ের কর্ণধার মোহাম্মদ আকবর আলী চৌধুরী চাল খালাস শুরুর কথা স্বীকার করে বলেন, ২২ হাজার টন আতপ চাল খালাস করার পর জাহাজটি ফিরে যাবে।