নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, জুলাই বিপ্লব, বিডিআর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোন অধিকার নাই। বৃটিশরা এদেশকে ব্যবসার লোভে পড়ে আমাদেরকে ২০০ বছর শাসন করেছে। তারা আমাদের অর্থনীতি, সমাজনীতি ধ্বংস করেছে। এদেশকে বিভিন্নদেশ বিভিন্ন ভাবে শাসন করেছে। যুগে যুগে যারাই শাসন করেছে তারাই ইসলামকে নির্মুল করার চেষ্টা চালিয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অত্যাচার নির্যাতনের পিরামিড মাড়িয়ে এতদুর এসেছে। জামায়াতে ইসলামী কোন রাজনৈতিক দলের কথা বলেনা, আমরা মানবতার মুক্তির কথা বলি।
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছিল জামায়াতে ইসলামীতে দাবায়ে দিয়েছি, কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেই শেষ হয়ে গেছে। শেষ হাসিনা তার নেতৃবৃন্দের কথা শুনে জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল ৩১ তারিখ, কিন্তু ৫ আগষ্ট তারা নিজেরাই দেশ থেকে পালিয়ে হিন্দুস্তান চলে গেছে। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দোসরদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান। কিয়ামতের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না। ১৮ বছরের নির্যাতন নিপীড়নের মাধ্যমে দেশকে নরকরাজ্যে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে তারাই প্রকৃত স্বৈরাচারের দোসর। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। উপজাতিদের অধিকার, মানবতা এবং নাগরিক অধিকারের জন্য জামায়াতে ইসলামী সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে সবাইকে শর্তহীন ১০ লক্ষ টাকা করে ঝণ দিবে। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে সুদ, ঘুষ,দুর্নীতি, শোষন, নির্যাতন কিছুই থাকবেনা। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশ হবে। আমরা ১৮ বছর সহ্য করেছি আপনারা ১৮ মিনিট ও সহ্য করতে পারেন নাই। সদলবলে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন নির্লজ্জ ভাবে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, রাষ্ট্র ব্যবস্থা,বিচার ব্যবস্থা সব ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্যাংক লুট, ব্যাংক ডাকাতি করেছে হায়েনার মতো। রাবারের ব্যাপারে কোন ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না। যারা এখানে সংযুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে একশনে যেতে হবে। এদেশকে শোষনের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য লাফালাফি করছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন আয়োজন হবে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ৪১ দফা বাস্তবায়নে সবাইকে শরীক হওয়ার আহবান জানান তিনি। দেশে সংখ্যালগু, সংখ্যাগুরু বলতে কিছুই থাকবে না, সবাইকে নিয়ে অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংযুক্ত হওয়ার আহবান জানান তিনি।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাইশারী ইউনিয়ন শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাইশারী ইউনিয়ন শাখার আমীর মোঃ ছলিম উল্লাহর সভাপতিত্বে ইউনিয়ন সেক্রেটারি মাওলানা মোঃ আহসান হাবিবের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বান্দরবান পার্বত্য জেলার আমীর এস এম আব্দুস সালাম আজাদ। প্রধান আকর্ষণের বক্তব্য রাখেন সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদের সন্তান আলী আহমদ মাবরুর।
এতে বিশেষ আকর্ষণের বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বান্দরবান পার্বত্য জেলার নায়েবে আমীর ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য এডভোকেট আবুল কালাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ এ কে এম ফজলুল হক।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে এস এম আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে ফ্যাসিস্ট সরকার এদেশের মানুষকে শোষন করেছে। ২০ টাকার চাল খাওয়ানোর কথা বলে ৭০ টাকায় চাল খাওয়াইছে। ঘরে ঘরে চাকরির কথা বলে লাশ উপহার দিয়েছে। ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীদের কে নির্যাতন করেছে। জামায়াতের নেতৃবৃন্দদেরকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, চাক সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিন্দু, বড়ুয়াদের অধিকার আদায়ে জামায়াতে ইসলামী সোচ্চার ভুমিকা রাখবে। সবাইকে জামায়াতে ইসলামীর পতাকা তলে আসার আহবান জানান। সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি মুক্ত দেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামীর পাশে থাকার আহবান জানান। বাইশারীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।
প্রধান আকর্ষণের বক্তব্যে আলী আহমদ মাবরুর বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিগত ১৬ বছর ধরে নির্যাতিত একটি সংগঠন। এ সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে। ৫ জন সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের কে খুন, গুম করা হয়েছে। আমরা আমাদের জীবিত বাবার জানাজার জন্য বের হয়েছিলাম, আমাদের বাবার জানাজা পড়তে দেয়া হয়নি। আল্লামা সাঈদীকে পরিকল্পিত ভাবে হাসপাতালে শহীদ করা হয়েছে। হাসপাতালের ভিতরে টিয়ারশেল, গুলি করেছিল হায়েনা সরকার। এমন কোনো নির্যাতন নাই যেটা শহীদ পরিবারকে করা হয় নাই। এই ফ্যাসিবাদ যেন আর ফিরে না আসতে পারে সেজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সারাদেশে জামায়াতের জোয়ার শুরু হয়েছে, এই মজলুম সংগঠনে সবাইকে শরীক হওয়ার আহবান জানান তিনি। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে জামায়াতে ইসলামীর বিকল্প নাই। ঘুষ, দুর্নীতি বিহীন সমাজ ও দেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামীর পাশে থাকার আহবান জানান তিনি।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফারুক আহমেদ, রামু উপজেলা জামায়াতের আমীর ফজলুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ রফিক বশরী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম আজাদ, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মামুন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক হামেদ হাসান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা ওমর ফারুখ সিরাজী, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মোঃ ইলিয়াছ সওদাগর, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবু নাছের সহ প্রমূখ।
কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল লিমিটেডের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এতে চাকমা,মারমা তথা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, মুসলিম, হিন্দু, বড়ুয়াসহ প্রায় ৮০০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। এমন মানবতার সেবার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে তারা ধন্যবাদ জানান। ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন পাঞ্জেরী শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা।
সভাপতির বক্তব্য দিয়ে কর্মী সম্মেলনের সমাপনী ঘোষণা করা হয়।
কর্মী সম্মেলন শেষে এলাকাবাসীর জন্য মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশনা করেন পাঞ্জেরী শিল্পী গোষ্ঠী চট্টগ্রাম।