বৃহস্পতিবার , ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অর্থনীতি

পাইকারি বাজার

আমদানি কম, ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্য তেলের দাম

আন্তর্জাতিক বাজারে ১১ নভেম্বর যেখানে প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হয় ১৩৭ টাকায়, সেখানে গতকাল ২০ নভেম্বর তা বিক্রি হচ্ছে ১৩২ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কেজিতে ৫ টাকা কমলেও দেশের বাজারে এর প্রভাব নেই। উৎপাদন ও আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কর কমানোর পরও দেশের বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পাম তেল। একই অবস্থা সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রেও। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার পরও দেশের বাজারে সেভাবে কমছে না। ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তিন মাস ধরে ১৬৯-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাম অয়েল। সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৮-১৮০ টাকায়।

আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমার কথা ঠিক, তবে কম দামের তেল এখনও দেশে আসেনি। তাই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়তিই রয়েছে। অবশ্য সরকার মূল্য সংযোজন কর ও আমদানিতে ভ্যাট কমানোর পর এখন দেশের বাজারেও দাম কমছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি থাকার কারণে গত চার মাসে কমেছে ভোজ্য তেল আমদানি। সয়াবিন তেল এবং পাম তেল আমদানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে তেল আমদানি কমেছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৯ মেট্রিক টন।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৯ মেট্রিক টন তেল আমদানি কম হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে যেখানে ৯ লাখ ১৯ হাজার ৭৯ মেট্রিক টন সয়াবিন এবং পাম অয়েল আমদানি হয়, সেখানে চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৭০ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। আমদানি কম হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ও কমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় গত চার মাসে এই খাতে তাদের রাজস্ব আয় কমেছে ১১০ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার টাকা।

আমদানিকারকরা দাম কমছে দাবি করলেও বাজারদর বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমদানিতে ভ্যাট কমানোর কারণে কেজিতে আমদানিকারকদের যত টাকা কম খরচ হচ্ছে, সেই পরিমাণ টাকা তেলের দাম কমেনি। আমদানিতে সরকার ভ্যাট কমিয়েছে ১০ শতাংশ। এই হিসাবে এক কেজি পাম তেলের আমদানি মূল্য যদি ১৩০ টাকা হয়, তাহলে কেজিতে ভ্যাট কমেছে ১৩ টাকা। কিন্তু বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে পাম তেলের দাম কমেছে মাত্র ৩-৪ টাকা।

দুই দফায় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং আমদানিতে ভ্যাট কমানোর পরও তেলের দাম খুব একটা কমেনি। প্রথম দফায় ভোজ্য তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ কমানো হয়। এতেও তেলের দাম না কমায় দ্বিতীয় দফায় আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ১৫ শতাংশের জায়গায় ৫ শতাংশ করা হয়। এরপরও বাজারে কমছে না পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হওয়াকে এর কারণ বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন ভোজ্য তেলের দাম কমছে।

ট্রেডিং ইকোনমিক্সের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৯৩৩ রিঙ্গিত; যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৪ হাজার ৮৫৩ টাকা। এই হিসেবে ওই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ১০৪ টাকায়। ওই সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে পাম তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। দাম বেড়ে ৭ অক্টোবর প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হয় ১১৫ টাকায়। এরপর আরও বেড়ে ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বিক্রি হয় ১৩৭ টাকা। এরপর এখন আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কমতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে কেজিপ্রতি পাম অয়েলের দাম কমেছে ৫ টাকা। ২০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি মালয়েশিয়ান পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩২ টাকায়।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না। তা ছাড়া শুল্ক কর কমানোর পরও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পাম অয়েল। ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে তিন মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পাম অয়েলের দাম বেড়ে যায় ৪৫ টাকা। আগস্ট মাসে যেখানে প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল ১২৯-১৩০ টাকায়, সেখানে তিন মাসের ব্যবধানে দাম বেড়ে গত সপ্তাহে বিক্রি হয় প্রতি কেজি ১৭৪ টাকায়। তবে দুই দফায় শুল্ক কমানোর পর দাম পাইকারিতে আগের চেয়ে কিছুটা কমতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২-৩ টাকা দাম কমেছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৬৯-১৭০ টাকায়।

পাম অয়েলের দাম বাড়ায় একই সময়ে বাড়ে সয়াবিন তেলের দাম। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ০ দশমিক ৯০ ডলার বা ১০৮ টাকা করে, সেখানে তিন মাসের ব্যবধানে দাম বেড়ে গত ৪ নভেম্বর বিক্রি হয় ১ দশমিক ০৮ ডলার বা ১২৯ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও বেড়ে যায় সয়াবিন তেলের দাম। তিন মাসের ব্যবধানে দাম বেড়ে এখন খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৮-১৮০ টাকায়।


সম্পর্কিত খবর