চট্টগ্রাম নগরীর হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম আইয়ুবের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল (শনিবার) বিকেল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরগরম। নগর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সন্তান, কলেজ পরিচালনা কমিটির সাবেক দাতা সদস্য মুজিবুর রহমানের মদদপুষ্ট একটি গ্রুপ এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কলেজের ছাত্র শিক্ষককে দায়ী করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে আজ কলেজের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-শিক্ষকরা গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে। বিবৃতিটি হুবহু তুলে ধরা হল।
”এই মৃত্যুর দায় শিক্ষার্থীদের নিতে হবে। -কেনো নিবে? গত ২৩/১১/২০২৪ ইং তারিখে বেলা ১১.৩০ টায় আমাদের প্রিয় স্যার হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম আইয়ুব আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আরবি: إِنَّا لِلَّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ) অর্থ: “আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবো”। স্যারের এই আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা সকলে শোকাহত ও গভীর মর্মাহত। আমরা স্যারের মাগফেরাতের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া চাই এবং স্যারের সকল গুনাহ মাফ করে স্যারকে আল্লাহ যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।
স্যারের এই অকাল প্রয়াণে স্যারের মাগফিরাতের জন্য দোয়ার পরিবর্তে কিছু কুচক্রী মহল স্যারের মৃত্যুকে নিয়ে রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। স্যারের মৃত্যুর জন্য ছাত্র শিক্ষককে দায়ী করছেন। যা একটি জঘন্য অপরাধ। উল্লেখ্য যে হাজেরা-তজু ডিগ্রী কলেজের সকল কার্যক্রম এখনো আওয়ামী দোসর নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে ভূমিদস্যু মুজিবের ইশারায় চলে।
গত ০৫ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবের বিরোধিতাকারী, ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরানো হয়েছে। হাজেরা-তজুতে অনিয়ম, দুর্নীতির তথ্য প্রমাণসহ সব নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, দুদক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাউশি, শিক্ষা বোর্ডের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে । আওয়ামী লীগ ও সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে ভুমিদস্যু মুজিবকে মদদ দানকারী শিক্ষক ছিল এমনকি তিনজন প্রাক্তন অধ্যক্ষের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অবৈধভাবে উপদেষ্টা হিসেবে লুটপাটের সহযোগী ছিল । দুর্নীতির সব প্রমাণ দেওয়ার পরও প্রশাসন চুপ ছিল তখন শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ আন্দোলন করলে সেনাবাহিনী এসে সাবেক তিন অধ্যক্ষকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে ও পরবর্তী এডহক কমিটি আসার পর তদন্ত কমিটি করে তদন্ত রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত উপাধ্যক্ষ এস এম আইয়ুব স্যারকে সাময়িকভাবে কলেজের সমস্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান। তদন্তে আইয়ুব স্যার নির্দোষ প্রমাণ হলে পুনরায় স্বপদে যোগদান করার কথাও বলা হয়। কিন্তু সে তদন্ত না করে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিব প্রথমে তার আত্মীয় সালমা ইসলামের টিভি চ্যানেল যমুনা সহ যুগান্তর পত্রিকায় সম্পুর্ন অসত্য নিউজ ছড়ায় যে ছাত্ররা শিক্ষকদের মারধর করে ছুরি দিয়ে হত্যা করার হুমকি সহ জোরপূর্বক পদত্যাগ করায় যার কোন ভিত্তি নেই, এরূপ কোন তথ্য প্রমাণ নেই। তারপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ফোন নাম্বারে হত্যার হুমকি দেয়। এসব নিয়ে শিক্ষার্থীরা চান্দগাঁও থানায় জিডিও করেছে । নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবকে যত আকাম তার সম্পূর্ণ সাপোর্ট দিয়েছে কলেজের উপদেষ্টারা । পরবর্তীতে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-শিক্ষকদের নামে সিরাজগন্ঞ্জে মিথ্যা মামলা হয়েছে। সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। ওনি ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর পর থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় নিয়মিত প্রাইভেট পড়িয়েছেন। স্যারের কখনো কোন শারীরিক অসুস্থতা ছিল না কোন মেডিকেল রিপোর্ট নেই। বিগত দিনগুলোতে স্যার সম্পূর্ণ সুস্থভাবে জীবন যাপন করছিলেন। গতকাল ২৩ নভেম্বর ২০২৪ শনিবারও তিনি নিয়মিত সকাল সাতটা থেকে প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন। প্রাইভেট পড়ানো অবস্থাতেই স্যার ৮.৩০ টার দিকে অসুস্থতাবোধ করেন এবং তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং হাসপাতালেই ১১.৩০ টায় মৃত্যুবরণ করেন।
মূলত ভূমিদস্যু মুজিব কলেজের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির চিত্র আড়াল করতেই এই কল্প কাহিনী। মুজিব উল্টো আইয়ুব স্যারকে দিয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করানোসহ শিক্ষকদের বহিষ্কারের জন্য মারত্মক চাপ দিতে থাকেন।আইয়ুব স্যার ছাত্রদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা না করাতে মুজিব এবং দেলোয়ার(ডামি সভাপতি, এডহক কমিটি) আইয়ুব স্যার কে ১১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে শোকজ করেন যেন ২৪ নভেম্বরের মধ্যে কলেজে যোগদান করেন নতুবা উনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং চাকুরিতে যোগদান না করলে আইয়ুব স্যারের প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর টাকা আটকে দেওয়ার হুমকি দেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আইয়ুব স্যার গত ১৮ নভেম্বর ২০২৪ কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। এসব চাপ নিতে না পেরেই মূলত তার মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এভাবে স্যারের আকস্মিক মৃত্যুর জন্য ছাত্র-শিক্ষকদের দায়ী করা এসব ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পুরনো স্বভাব । স্যারের স্বাভাবিক মৃত্যুকে ইস্যু করে মুজিব বাহিনী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সহ মামলা হামলার মাধ্যমে ছাত্র শিক্ষককে হয়রানি করে কলেজের পরিস্থিতি অচল করার কাজে লিপ্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকেও এই প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। এই সকল ষড়যন্ত্র থেকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
‘কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত’ كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ
অর্থ: ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ (সূরা: আল ইমরান, আয়াত: ১৮৫)।
হায়াত মউত আল্লাহর হাতে কালকে স্যার গেছেন যে পথে এরপরে আমি আপনাকেও যেতে হবে সেই পথে কেউ চিরস্থায়ী নয়। স্যারের মৃত্যু নিয়ে আর কোনো রাজনীতি চাই না। সবাই স্যারের জন্য দোয়া করবেন।”