- একেকটিতে সদস্য সংখ্যা ১০-১৫ জন
- থানায় জিডি করেও মিলছে না ফোন
- সড়কের পাশে প্রকাশ্যে চোরাই ফোনের হাট
নগর জুড়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মোবাইল ছিনতাইকারীরা। প্রতিদিনই অজান্তে খোয়া যাচ্ছে নিজের ব্যবহৃত মোবাইল। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মোবাইল ছিনতাইয়ে অন্তত দশটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্রুপের একেকটিতে সদস্য সংখ্যা অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন। মোবাইল চুরি হলেও অধিকাংশরাই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করছে না। কিছু কিছু লোক থানায় জিডি করলেও মোবাইল ফোন উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন সক্রিয় ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম নগরীর মার্কেট-বিপনি বিতান, রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্টেশন, বাসসহ গণপরিবহনে মোবাইল ছিনতাইকারীদের দাপট দেখা যাচ্ছে। লোকজনের কাছ থেকে নানা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোবাইল ফোন। চুরি করা দামী মোবাইল ফোনগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিড়ম্বনা এড়াতে পরিবর্তন করা হচ্ছে আইএমইআই নম্বর। নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার কেন্দ্রিক একটি চক্র চোরাই মোবাইল ফোনগুলো কিনে নিচ্ছে।
বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নগরে মোবাইল ছিনতাইয়ে জড়িত গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- জালাল গ্রুপ। এ গ্রুপ মোবাইল ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করে নগরের বারিক বিল্ডিং মোড়, ফ্রি-পোর্ট ও অলংকার এলাকায়। এ গ্রুপে জালাল, জুয়েল, কাইয়ুম, সুজন,ফারুক, সুমন, বাপ্পি, বাবুসহ রয়েছে একাধিক মোবাইল ছিনতাইয়ে প্রশিক্ষিত পৃষ্ঠা ৭ কলাম ৩
সদস্য। শাহাবুদ্দিনের গ্রুপ ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করে নয়াবাজার, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, একেখান, অলংকার, টাইগার্স, নিউমার্কেট ও জিইসি মোড় এলাকায়।
এ গ্রুপে শাহাবুদ্দিন ছাড়াও বাদশা ওরফে পিচ্চি বাদশা, শাহজাহান, সুমন, রুবেল, দুলাল, রবি, আবছার, বুলবুল, রকি ও তাজু। পিচ্চি রুবেল গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে নগরের দুই নম্বর গেইট ষোলশহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাসটার্মিনাল, লালখান বাজার পর্যন্ত। এ গ্রুপে রুবেল, সুমন, রহমত, সাইফুলসহ অন্তত ১০ জন প্রশিক্ষিত ছিনতাইকারী রয়েছে।
নগরের কোতোয়ালি, চান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় ছিনতাই কার্যক্রম পরিচালনা করে সোর্স দুলাল ও বাবুল। তাদের গ্রুপে আছে একাধিক প্রশিক্ষিত সদস্য। নগরীর মাদারবাড়ি, ডবলমুরিং এলাকায় মোবাইল ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করে তুষারের গ্রুপ। এ গ্রুপের দল নেতা তুষার ছাড়াও সদস্য হিসেবে আছে জাহাঙ্গীর, সুমন, জীবন, আলমগীর, সাইফুল, ফয়সাল, পিচ্চি ফয়সাল, বদি, ইমন ও বারেক। নগরের আগ্রাবাদ, চৌমুহনী এলাকায় ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করে আলো ওরফে পিচ্চি আলো। তার গ্রুপে আছে ১০-১২ জন প্রশিক্ষিত সদস্য।
নগরের ধনিয়ালাপাড়া, নিউমার্কেট এলাকা, খুলশী, বন্দর, ডবলমুরিং, কোতোয়ালি থানা এলাকায় মোবাইল ছিনতাই দেখভালো করে রাব্বি গ্রুপ। এ গ্রুপে আছে আল আমিন, সুজন, মাইনুল, জুয়েল, সাদ্দাম, কাইয়ুম, রবিন ও হাসানসহ একাধিক প্রশিক্ষিত সদস্য।
এছাড়াও নগরের দেওয়ানহাট ও টাইগাটপার্স এলাকায় মোবাইল ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ফয়সালের গ্রুপ। এ গ্রুপে সুমন, বাবুল, হালিম, শাহাবুদ্দিন, অন্তর, পিচ্চি জাহিদ, সোহেল, জামাই সাগর, চাকমা সুমন, সাবু, বদি, মেহেরাজ ও বাপ্পি।
নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন জামালখান এলাকার বাসিন্দা মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিদিনই মোবাইল ফোন চুরি হচ্ছে। আমার এক আত্মীয়ের মোবাইল ফোনটি চুরির পর থানায় জিডি করেছিলাম। কিন্তু গত দুই মাসেও সেটি মিলেনি। অথচ নগরীর নিউমার্কেট মোড়, নতুন ও পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন, বহদ্দারহাট, ষোলশহর, ইপিজেডসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে চোরাই মোবাইল ফোন। চোরাই মোবাইল ফোন প্রকাশ্যে বিক্রির বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানার পরও আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘মোবাইল চুরির অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করা হয়। আমরা তদন্ত করে চেষ্টা করি মোবাইল ফোন উদ্ধার করার।’